পুরুষেরা যেসব অসুখ নিয়ে লজ্জা ও সংকোচ বোধ করে

 অণ্ডকোষের সমস্যা, ইরেক্টাইল ডিসফাংশন, প্রিম্যাচিওর ইজাকুলেশন, ফিস্টুলা, স্তন বৃদ্ধির মত যেসব অসুখ নিয়ে সংকোচে ভোগেন পুরুষেরা

শাহনাজ পারভীন

 বিবিসি বাংলা, 

ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১


পুরুষেরা অনেক সমস্যা স্ত্রীর সাথে কথা বলতেও লজ্জা বোধ করেন।

নারীরা প্রায়শই লজ্জা ও সংকোচের কারণে বেশ কিছু অসুখ সম্পর্কে পরিবারের কাছে তথ্য গোপন করেন। দেখা যায় খুব জটিল পরিস্থিতি হলে তখনই সেটি প্রকাশ পায়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী পুরুষেরাও অনেক সময় তাদের নানা অসুখ সম্পর্কে লজ্জা বোধ করেন এবং তথ্য গোপন করেন।

 চিকিৎসকেরা বলছেন, এর বেশিরভাগই প্রজননতন্ত্রের নানা অসুখ। অণ্ডকোষের নানাবিধ সমস্যা, যৌন দুর্বলতা, ফিস্টুলা, গাইনোকোমেশিয়া বা পুরুষের স্তন বৃদ্ধি এর মধ্যে কয়েকটি। 

স্ত্রীর কাছে বলতেও যখন লজ্জা

ঢাকার সাবিনা ইয়াসমিন (ছদ্মনাম) মাস কয়েক আগে খেয়াল করছিলেন তার স্বামী ঠিকভাবে বসতে পারছেন না। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল কিছু একটা তার জন্য বেশ ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 "প্রথমে আমাকে জানালো যে তার পায়ুপথের কাছে একটা ফোঁড়া হয়েছে। তখন আমি দেখতে চাইলে ও রাজি হল না। যখন দেখছি যে ও খুব কষ্ট পাচ্ছে তখনও সে আমাকে দেখতে দেয় না। এরকম বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে। এরপর এক রকম জোর করেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। সে তখনও আমাকে ডাক্তারের চেম্বারের মধ্যে ঢুকতে দেয়নি।"

সাবিনা ইয়াসমিন পরে জানতে পারলেন তার ৫০ বছর বয়সী স্বামীর পায়ুপথে ফিস্টুলা হয়েছে। পায়ুপথের কাছে নিতম্বের একটি অংশে সুড়ঙ্গের মতো হয়েছে।

 সেটি মিশে গেছে পায়ুপথের সাথে। সেখানে রীতিমতো পুঁজ জমে গেছে। এই সমস্যার চিকিৎসায় তিন ধাপের অস্ত্রোপচার দরকার হয়েছে।

দশ দিন পরপর মোট তিনবার করা অস্ত্রোপচারে খরচ হয়েছে ছয় লাখের মতো। 

সাবিনা ইয়াসমিন বলছেন, "প্রতিবার অপারেশনের পর একটা মোটা গজ কাপড় ঝুলে থাকতো সুড়ঙ্গটার মুখ থেকে। চিন্তা করেন তিন চার ইঞ্চি মাংসের মধ্যে ঠেসে গজ কাপড় ঢুকানো। প্রথমবার জায়গাটা আমার দেখার সুযোগ হয়েছে যখন অপারেশনের পর ড্রেসিং পরিষ্কার করার দরকার হয়েছে।

 "আমি ওর স্ত্রী। আমাকেও কি একটু জানাবে না? সময়মত জানলে একটু গুগল করতে পারতাম। তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে যেতে পারতাম। তাহলে বিষয়টা এত খারাপ অবস্থায় যেত না।" 

চিকিৎসকেরা বলছেন, পুরুষেরা যেসব অসুখ সম্পর্কে কথা বলতে সংকোচ বোধ করে তার বেশিরভাগই প্রজননতন্ত্রের নানা অসুখ।

 যেমন অণ্ডকোষের নানাবিধ সমস্যা, ইরেক্টাইল ডিসফাঙ্কশন, প্রিম্যাচিওর ইজাকুলেশন, ফিস্টুলা, হার্নিয়া, গাইনোকোমেশিয়া বা পুরুষের স্তন বৃদ্ধি এর মধ্যে কয়েকটি।


 😊স্বাস্থ্য: 'ওরাল সেক্স নারীর যোনিতে রোগ ছড়ায়'

👉 'দিনে পাঁচবার যৌনমিলনও যথেষ্ট ছিল না'

👉 ভ্যাজাইনিসমাস: যে ব্যাধি যৌনমিলনে শুধুই যন্ত্রণা দেয়


অণ্ডকোষের নানাবিধ সমস্যা 

ইউরোলজিস্ট ডা. ফজল নাসের অণ্ডকোষের কয়েকটি অসুখ সম্পর্কে ধারণা দিলেন। হাইড্রোসিল, যাতে অণ্ডকোষের বাইরের দিকে পানি জমে, অণ্ডকোষ ফুলে যায়। প্রদাহ অথবা আঘাতের কারণে এটি হতে পারে। অণ্ডকোষের দুই পাশে, অথবা একপাশেও এটি হতে পারে। 

হার্নিয়া হলে মনে হবে পেটের ভেতর থেকে নাড়ি বের হয়ে আসতে চায়। হাঁচি, কাশি দিলে অথবা জোরে হাঁটলে মনে হবে তলপেটের নিচ থেকে কিছু একটা অণ্ডকোষের ভেতরে চলে আসতে চাচ্ছে। 

অণ্ডকোষকে ঝুলে থাকতে সাহায্য করে, বলা যেতে পারে তারের মতো এই অংশটি অণ্ডকোষের সাথে পেঁচিয়ে গেলে তাকে বলা হয় টেস্টিকুলার টরশন। 


পেট থেকে যে রক্তনালী অণ্ডকোষের সাথে সংযুক্ত থাকে সেটা ফুলে যেতে পারে, দেখতে কৃমির মতো মনে হতে পারে, যাকে বলা হয় ভেরিকোসিল। 

টেস্টিকুলার সিস্ট হলে মনে হবে দুটি অণ্ডকোষের সাথে নতুন আরও অণ্ডকোষ গজিয়েছে। 

তিনিডা. নাসের বলছেন, অণ্ডকোষের বেশিরভাগ সমস্যায় অঙ্গটি ফুলে যাওয়া একটি লক্ষণ। বেশিরভাগ সমস্যায় ব্যথা হতে পারে।




পুরুষদের এসব সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন তার স্ত্রী ও সঙ্গী।


অণ্ডকোষের সমস্যা নিয়ে তখন অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাবেন যখন খেয়াল করবেন যে অণ্ডকোষের অনুভূতি চলে গেছে। অণ্ডকোষে হাত দিলে, এমনকি উরুতেও একটু ঘষা লাগলে পুরুষদের এক ধরনের অনুভূতি হয়। সেই অনুভূতি যখন বোধ করবেন না এবং আস্তে আস্তে অণ্ডকোষ ফুলে যাচ্ছে, এই দুটো সমস্যা খেয়াল করলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাবেন। কারণ এটি ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।"

 গাইনোকোমেশিয়া

৩৫ বছর বয়সী একজন তরুণ, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার এক বাসিন্দা বলছেন, যখন কৈশোরে পা দিয়েছেন তখন বুকের কাছে মেয়েদের স্তনের মতো কিছু একটা প্রথম খেয়াল করেন। 

বাড়ির কর্মচারীদের একজন বিষয়টার প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছিলেন, যে ছেলেদের এমন হওয়ার কথা না। এরপর থেকে বাকি জীবন পরণে পোশাক ছাড়া তাকে দেখেছেন শুধু ঘনিষ্ঠ কয়েকজন।


 "একটা অ্যাফেয়ার ছিল আমার কলেজ লাইফে। যার সাথে অ্যাফেয়ার ছিল, সেই ভদ্রমহিলা অনেক সময় এটা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করতো যে আল্লাহ'র তো তোকে আসলে মেয়ে বানানোর কথা ছিল, ভুলে ছেলে বানাইছে।"

 "বাংলাদেশে যেটা হয় যে পুরুষরা খালি গায়ে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু আমি সেটা কখনোই পারতাম না। ম্যাট্রিকে যখন পড়ি, তখন থেকে আমার পুরো লাইফে ঘনিষ্ঠ দু-একজন ছাড়া আমাকে খালি গায়ে কেউ দেখেনি।" 

যে অসুখটি সম্পর্কে তিনি বলছেন তার নাম গাইনোকোমেশিয়া বা পুরুষদের স্তন বৃদ্ধি। 

তার এই সংকোচের কারণ সম্পর্কে তিনি বলছিলেন, "নরমালি আমরা যেটা দেখে অভ্যস্ত তার বাইরে আমরা যদি কিছু দেখি তাহলে সেটা আমাদের মধ্যে একটা সংকোচ তৈরি করে। পুরুষ মানুষের চেস্ট যেরকম থাকার কথা আমার সেরকম না এটা হয়ত আমার সংকোচের কারণ"। 

"আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে যখন থাকতাম তখন আমার রুমমেটরা খালি গায়ে বসে থাকতো। তারা আমাকে বলতো, অনেক গরমকালেও কেন আমি শার্ট পরে বসে আছি। আমার সংকোচটা ছিল ওরা আমাকে নিয়ে হয়ত হাসাহাসি করবে। কলেজের বান্ধবী যখন খোঁটা দিছিল তখনও একটু লজ্জা পাচ্ছিলাম।"

👉 আসক্তি বলে কি সত্যিই কিছু আছে? 

👉ভারতে ঋতুমতী নারীরা কেন জরায়ু ফেলে দিচ্ছেন?

👉 অত্যধিক যৌন আসক্তি কি আসলেই 'নেশা'? 

👉কুমারীত্ব পুনরুদ্ধার: কেন নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে?


আরও জানতে ও চিকিৎসা পদ্ধতি ---


Post a Comment

0 Comments